October 23, 2024, 2:30 am

নোটিশ:
সংবাদদাতা আবশ্যক
সংবাদ শিরোনাম:
চট্টগ্রামে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি কে দীর্ঘ ২১ বছর পর গ্রেফতার। গাইবান্ধায় তিন দিনব্যাপী কৃষি মেলা সিরাজগঞ্জে মেলায় অশ্লীল নৃত্য ও গান পরিবেশন, আটক ২০০ চট্টগ্রামে বালক শিশু ধ*র্ষ*ণের ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেফতার। বিরামপুরে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে শিক্ষকদের সাথে অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত জয়পুরহাটের জেলা জজ আদালতে ৪২ জনের মধ্যে ৩২ জনই সাবেক আইনমন্ত্রীর এলাকার! বগুড়া সোনাতলার হ*ত্যা মামলার আসামি চট্টগ্রাম হতে গ্রেফতার। চট্টগ্রামের চকবাজার হতে ০১টি বিদেশি পিস্তল ও ১৬ রাউন্ড গুলিসহ এক জন গ্রেফতার। বগুড়ার শাজাহানপুরে মাদ্রাসায় ভর্তি কে কেন্দ্র করে মারপিট। আটক এক। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বিনামূল্যে ২৬ হাজার কিশোরীকে এইচপিভি টিকা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বদলগাছীতে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্প জং-মরিচা ধরে নষ্ট।

হাফিজার রহমান, বদলগাছী (নওগাঁ): নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের পূর্ব বনগ্রাম এর হাস্তা বিলে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্পে পূনর্বাসিত ২৭০ টি পরিবারের মধ্যে ১৮৫টি ঘরই ফাঁকা রয়েছে। আবাসন প্রকল্প দীর্ঘ ১২ বছর অতিবাহিত হলেও পূনর্বাসিত গ্রামে ফিরে যাওয়া পরিবারগুলো আর এই আবাসনে ফিরে আসেননি। আর বেশিরভাগ টিনের ব্যারাকগুলি জং-মরিচা ধরে ফুটা ফুটা হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার আবাসন প্রকল্লের ভিতরের রাস্তাগুলি দিয়ে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত কাদার কারণে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর। আর এসব রাস্তা ও ব্যারাকগুলি সংস্কারের জন্য নেওয়া হয়নি কোন উদ্যেগ। আবাসন প্রকল্পের ভিতরের রাস্তা ও ব্যারাক গুলো সংস্কার করা না হলে ২/৩ বছরের মধ্যে সব ব্যারাক গুলো শুণ্য হয়ে যাবে।

জানা যায়, পূর্ব বনগ্রাম আবাসন প্রকল্পে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভূমিহীনদের তালিকা প্রনয়ণ করে ২৭০ টি পরিবারকে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘর বরাদ্দ করে ২০১২ সালে ২৭০টি পরিবারকে এই আবাসনে পূনর্বাসন করা হয়। পূনর্বাসিত পরিবাররা প্রথম দিকে আনন্দের সংগে ওই ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করলেও ৩/৪ মাসের মধ্যে পুরো ব্যারাকগুলো যেন ফাঁকা হয়ে যায়। তারা তাঁদের বরাদ্ধকৃত আবাসন ঘরে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের বাড়ীতে চলে যায়। বর্তমানে ওই আবাসন প্রকল্পে মাত্র ৬০ থেকে ৭০টি পরিবার বসবাস করছে যা শুরু থেকেই। প্রায় ৯ বছর পর আরো ১০ থেকে ১৫টি পরিবার এই আবাসন প্রকল্পে নতুন করে বসবাস শুরু করে। বর্তমান এখানে মোট ৮৫টি পরিবার বসবাস করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব বনগ্রামের আবাসন প্রল্পের ভিতরের রাস্তাগুলো সব কাদায় একাকার হয়ে গেছে। বেশির ভাগ ব্যারকগুলো জং, মরিচা ধরে ভেঙ্গে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে। যে সব ব্যারকে লোকজন বসবাস করছে সেই ব্যারাকগুলোর বেশির ভাগ ব্যারাক জং-মরিচা ধরে টিনগুলো খুলে খুলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আবার কারো কারো ব্যারাকের ঘরের টিনের চাল ফুটো ফুটো হয়ে গেছে।

ব্যারাকে বসবাসকৃত রফিকুল ইসলাম সাংবাদিককে দেখতে পেয়ে বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে ঘরের ভিতরে খুব কষ্টে দিন-রাত যাপন করছি। ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে টিনের চালা পুরাটাই ফুটো হয়ে গেছে সেটি দেখান।

আবাসন প্রকল্পে বসবাসকৃত লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, আবাসানে পূর্নবাসিত করার আগে সরকারি নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছিল আবাসনে বসবাসকৃত লোকজনদের। এ পর্যন্ত তারা আবাসনে বসবাস করে কয়েক বছর থেকে নাম মাত্র কিছু সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। এই আবাসনে ২টি পুকুর রয়েছে তা অবৈধ ভাবে ইউএনও অফিস থেকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় এ বিষয়ে দৈনিক সংবাদে এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০১৮ ইং সালে পুকুর দুটি পূনর্বাসিতদের দখলে ছেড়ে দেওয়া হয়। কর্মসংস্থান না থাকায় লোকজন থাকতে চায়না এ আবাসন প্রকল্পে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হল নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে বিল বা জলাশয়ে আবাসন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু জলাশয়ে বসবাস যোগ্য নয় জন্যই তৎকালীন ইউএনওর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাবেক জেলা প্রশাসক মোছাঃ নাজমানারা খানম এর স্বাক্ষর জনিত চিঠির মাধ্যমে পূর্ববনগ্রাম হাস্তা বিল সহ উপজেলার কিসমত পাঁচ ঘড়িয়া বিল, মাহমুদ বিলা ও ঐতিহ্যবাহী নহেলাকাষ্টগারী বিল সম্পূর্ন রূপে বিলের শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা জমিতে রূপান্তর করা হয় বলে উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা যায়। উপজেলার পূর্ব বনগ্রাম হাস্তাবিল একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয় যা ভিটা মাটিতে রূপান্তর করা হয়েছে।

আবাসন পরিবারের সিদ্দিক, খুদু, হামিদ, দুলাল হোসেন, নূর ইসলাম, ওয়াজদুল, কুদ্দুস, লিলিফা, লুৎফা বেগম, ফেরেজা বেগম ও শাহিদা জানান, ধুধু মাঠের মধ্যে এই আবাসন প্রকল্প নেই কোন কর্মসংস্থান। আশে পাশে কোন গ্রামও নেই যে মানুষের বাড়িতে কাজ করবো। পুকুর গুলি ৫ বছর আগে অবৈধ দখল মুক্ত হয়েছে। এছাড়াও আবাসনে বসবাসকারীরা জানালেন রাস্তা, স্কুল সহ বিভিন্ন সমস্যার কথা।

আবাসন প্রল্পের সভাপতি আব্দুল জব্বার জনায়, আবাসন প্রকল্পের যে রাস্তা রয়েছে, একটু রাত হলে চলাচল হয় বিপদজনক। ব্যারাকের ভিতরে চলাচলের যে রাস্তা রয়েছে তা ইট সোলিং না করে দিলে এখানে বসবাস করা খুব কষ্টকর। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা পিচ্ছিল কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আবাসনের প্রায় সব ব্যারাকগুলি এখন নষ্ট হতে শুরু করেছে। এখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের লেখাপড়া করার জন্য নেই কোন বিদ্যালয়, ছেলে মেয়েরা কোথায় গিয়ে পড়াশুনা করবে। এখানে নামাজ পড়ার জন্য ছিলনা কোন মসজিদ। কিন্তু বছর ৩ আগে এখানে বসবাসকারীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে একটি টিনের মসজিদ তৈরি করা হয়। সেই মসজিদের টিন গুলো খুবই খারাপ। রোদ হলে প্রচন্ড গরম হয় ঘরে। টিনের ঘরে দিনের বেলায় গরমে থাকা যায় না। তার পরেও খেয়ে না খেয়ে নানা ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে বর্তমানে ৮০ থেকে ৮৫টি পরিবার এখানে বসবাস করছি। রাতে ঘরের জানালা খুলে রাখা যায় না। অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা ও নেশা খোরেরা এসে জানালায় ধাক্কাধাক্কি করে।

জব্বার আরো বলেন, এই আবাসনে বসবাসরত যাদের গ্রামে বাড়ী ঘর রয়েছে তারা আবাসনের ঘরে এক রাত বসবাস করেই তালা চাবি ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেছে। কিছু কিছু পরিবার আরও ২/১ দিন বেশি থেকেছে। এখন অধিকাংশ ব্যারাক ফাঁকা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানে বসবাসরত লোকজনদের কোন কর্মসংস্থান নেই। তারা সরকারিভাবে কোন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পায় না। এই আবাসনে মোট ৫৪ টি ব্যারাক রয়েছে। প্রতি ব্যারাকে ৫টি করে পরিবার থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অধিকাংশ ব্যারাক বর্তমানে জাং-মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এই জং মরিচা ধরা ব্যারাক গুলি সংস্কারের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহবুব হাসান এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি আমি আসার অনেক পূর্বে এই আবাসন প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। আমি ২/১ দিনের মধ্যে সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবো। ঘুরে এসে সেখানকার সম্যসাগুলো সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখবো ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © DailyAloPratidin.com